‘নুন’ হল একাদশ শ্রেণির বাংলা ক বিষয়ের একটি কবিতা। কবিতাটির কবি জয় গোস্বামী।
নুন কবিতার উৎস, প্রকাশকাল, প্রেক্ষাপট, সারাংশ ও নামকরণের সার্থকতা – একাদশ শ্রেণি – বাংলা
নুন
জয় গোস্বামী
কবি পরিচিতি
উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম নেতৃত্বদানকারী কবি জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই নভেম্বর ভারতের কলকাতায়। জন্মসূত্রে পিতা মধু গোস্বামী কবির বাল্য বয়সেই রানাঘাটে নিয়ে আসেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। তখন শিক্ষয়িত্রী মায়ের অভিভাবকত্বে বড় হতে থাকেন। বিদ্যালয় শিক্ষাজীবন মাত্র একাদশ শ্রেণী। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতার বিষয় ছিল তাঁর সংসারে বহু স্বপ্নের জড়িমা মাখা ‘শিলিং ফ্যান’। তাঁর প্রথম কবিতার সংকলন ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেট গুচ্ছ’ ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
তাঁর লেখা অন্যান্য কাব্যগ্রন্থসমূহ হলো – প্রাত্নজীব (১৯৭৮), আলেয়া হ্রদ (১৯৮১), ভুতুম ভগবান (১৯৮৮), ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা? (১৯৮৯), বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতায (১৯৯৫) ইত্যাদি। ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা? ও যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল দুটি গ্রন্থের জন্য দুবার পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। পাতার পোশাক ও পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার।
উৎস
কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’’ কবিতাখানি সংকলিত হয়েছে তাঁর ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থ থেকে। যেটি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ই মে, বাংলার ১৩৯৫ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ প্রকাশিত হয়। কাব্যগ্রন্থটি ডা. জয়ন্ত সেনকে উৎসর্গ করেন। উক্ত কবিতাখানি ‘জয়ের শ্রেষ্ঠ’ কবিতাতেও স্থান পেয়েছে।
প্রকাশকাল
নুন কবিতাটি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ই মে, বাংলার ১৩৯৫ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ প্রকাশিত হয়।
প্রেক্ষাপট
সাতের দশকে দুই বাংলাতে এক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদ্যমান ছিল। এই সময় নকশালবাড়ি আন্দোলন, দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, অন্নের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছিল। তার মধ্যে নিম্নবিত্ত মানুষদের বেঁচে থাকার চেষ্টা ও স্বপ্ন দেখা এই আত্ম-অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে কবিতাটির রচিত।
সারাংশ (বিষয়বস্তু)
‘নুন’ – কবিতাটি এক নিম্নবিত্ত পরিবারের দিনযাপনের কাহিনি। সাধারণ নিরন্ন মানুষের বেদনার ঝাঁপি থেকে বেরুতে থাকে দুঃখের বারোমাসা। নিরন্ন-বুভুক্ষু-শ্রমজীবী মানুষের চাহিদা অত্যল্প, সাধারণ ভাত-কাপড়েই তাদের দিনাতিপাত হয়; আর তাতেই তাদের শান্তি ও স্বস্তি। নিম্নবিত্ত মানুষের রোজগার জীবন অসুস্থতা, ধারদেনা আর দৈন্যতায় অতিবাহিত হয়। জীবনের যাবতীয় অপ্রাপ্তি, অক্ষমতা ও দুঃখ ভুলতে তারা গঞ্জিকার শরণাপন্ন হয়। ফলে স্নায়বিক শৈথিল্য সাময়িক তাদের কঠোর বাস্তবতাকে ভুলিয়ে রাখে।
দারিদ্র্য যাদের নিত্যসঙ্গী, তাদের প্রতিদিনের বাজার না হওয়ায় বেশিরভাগ দিন অর্ধাহারে-অনাহারেই কাটে। অভাবের সংসারে হঠাৎ অর্থ পেলে বেহিসাবে সুখের সন্ধান করে তারা। মাত্রাছাড়া বাজার করে; মাথা গোঁজার এক চিলতে পরিসরে সাধের গোলাপ চারার জায়গা হবে কিনা বা তাতে ফুল ফুটবে কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই। মাঝে মাঝে দুপুর রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে সারা পাড়া মাথায় করে অভাবী মানুষ। কিন্তু অবহেলিত মানুষের আবেদনের সমাজ উদাসীন থেকে যায়। তাই তারা বেঁচে থাকার প্রাথমিক চাহিদা – ‘ঠান্ডা ভাতে নুনের’ ঐক্যবদ্ধ দাবি রাখে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে। আর কবি জয় গোস্বামী যেন সারা কবিতায় এই দাবিই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।