জীবনানন্দ দাশ প্রবন্ধ রচনা (Jibanananda Das rachana Class 12 in bengali), জীবনানন্দ দাশ রচনা ক্লাস 12, জীবনানন্দ দাশ এর জীবনী (Jibanananda Das Biography in Bengali) , ১২৫ বর্ষে নির্জনতম কবি জীবনানন্দ দাশ, জীবনানন্দ দাশ উচ্চ মাধ্যমিক 2025 রচনা (HS 2025), উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা রচনা
১২৫ বর্ষে নির্জনতম কবি জীবনানন্দ দাশ – প্রবন্ধ রচনা | Jibanananda Das rachana Class 12 Bengali
প্রদত্ত সূত্র ও তথ্য অবলম্বনে একটি প্রবন্ধ রচনা করো :
জীবনানন্দ দাশ
জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ বরিশাল-পূর্ববঙ্গ।
পিতা-মাতা: সত্যনন্দ দাশ ও কুসুমকুমারী দাশ।
শিক্ষা : ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন, ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টার মিডিয়েট উত্তীর্ণ। ১৯১৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স সহ বি এ ডিগ্রি, ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ ডিগ্রি।
পেশা: বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা। কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক।
উল্লেখযোগ্য কর্ম: বনলতা সেন, রূপসী বাংলা, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির প্রভৃতি কাব্য। মাল্যবান, সুতীর্থ প্রভৃতি উপন্যাস।
পুরস্কার: রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫২)। সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার (১৯৫০-মরণোত্তর)।
মৃত্যু: ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪।
জীবনানন্দ দাশ উচ্চ মাধ্যমিক 2025 রচনা (HS 2025)
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’
– আদর্শ ছেলে (কুসুমকুমারী দেবী)
ভূমিকা
কুসুমকুমারী দেবীর ‘আদর্শ ছেলে’ জীবনানন্দ দাশ যিনি কথায় নয় কাজেই বড় হয়ে কবিতা কথাকে সত্যি প্রমাণিত করেছেন। উত্তররৈবিক কাব্যে বিশ শতকের জটিল মনের আশ্চর্য প্রতীক জীবনানন্দ। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় যাঁরা রবীন্দ্রনাথের পরও নতুন কথা নতুন ভাবে বলা যায় – একথা ভেবেছিলেন ও সেকথা আমাদের শোনাতে চেয়েছিলেন, জীবনানন্দ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দ সৃষ্ট কাব্যজগত – অনুভূতির আলোছায় তৈরি চেতনার জগত। তাই সমালোচক বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন —
‘তাঁর কাব্য বর্ণনাবহুল, তাঁর বর্ণনা চিত্রবহুল এবং তাঁর চিত্র বর্ণবহুল।’
জন্মিলে মরিতে হবে
জীবনানন্দ ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ও পরাধীন ভারতবর্ষের বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন – বর্তমান যা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। পিতা ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক সত্যানন্দ দাশ ও মাতা বিখ্যাত মহিলা কবি কুসুমকুমারী দেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান জীবনানন্দের ডাক নাম মিলু। যিনি স্বভাবই ছিলেন অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির। জন্মসূত্রে তার পদবী দাশগুপ্ত হলেও তিরিশের দশকের শুরুতে তিনি ‘গুপ্ত’ বর্জন করে কেবল ‘দাশ’ লেখা শুরু করেন।
সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা
পিতা কম বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন বলে, বাড়িতে মায়ের কাছেই কবির বাল্য শিক্ষার সূত্রপাত। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের জীবনানন্দকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয় এবং পরে এখান থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। দু’বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটান; এরপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে সাম্মানিক স্নাতক হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
জীবনানন্দ দাশ রচনা ক্লাস 12
কর্ম করে যাও ফলের আশা করো না
১৯২২ থেকে ১৯৫৪ সালে অকাল মৃত্যু পর্যন্ত অধ্যাপনার কাজে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তি। প্রথমে সিটি কলেজে পড়ানো শুরু করলেও পরে সেখান থেকে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁকেও ছাঁটাই করা হয়। এরপর একে একে খুলনার বাগেরহাট কলেজ, দিল্লির রামযশ কলেজ, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ, খড়্গপুর কলেজ, বড়িশা কলেজ ও হাওড়া গার্লস কলেজ। দারিদ্র্য আর অনটন ছিল তাঁর কর্মজীবনের ছায়াসঙ্গী। শান্তি আর স্থিতি সমস্ত জীবন ধরে পেতে চেয়েও পাওয়া হলো না কবির।
সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি
মা কুসুমকুমারী দেবীর প্রভাবেই ছেলেবেলায় ১৯১৯ সালে ‘বর্ষা আবাহন’ কবিতার মধ্য দিয়ে কবির কাব্যের উঠানে প্রবেশ। তিনি কাব্য জগতে স্থির আদর্শ ও প্রত্যয় নিয়ে যতটা না নিজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন, তাঁর থেকে অনেক বেশি পরবর্তীকালের কাব্য প্রবাহকে প্রভাবিত করেছেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ গুলি নিম্নরূপ –
- ১। ঝরা পালক – ১৯২৭
- ২। ধূসর পান্ডুলিপি ১৯৩৬
- ৩। বনলতা সেন – ১৯৪২
- ৪। মহাপৃথিবী – ১৯৪৪
- ৫। সাতটি তারার তিমির – ১৯৪৮
- ৬। রূপসী বাংলা – ১৯৫৭ (মৃত্যুর পর প্রকাশিত)
- ৭। বেলা অবেলা কালবেলা (মৃত্যুর পর প্রকাশিত)
জীবদ্দশায় কথাসাহিত্যিক হিসেবে জীবনানন্দের কোন পরিচিতি ছিল না। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ২১ এবং ছোট গল্প সংখ্যায় শতাধিক। তাঁর সর্বাধিক পরিচিত উপন্যাস ‘মাল্যবান’ এছাড়াও ‘নিরূপম যাত্রা’, ‘কারুবাসনা’, ‘জলপাহাটি’, ‘প্রেতিনীর রূপকথা’ ইত্যাদি।
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন
কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’এ নিজস্ব সুর ফোটেনি। কবি বলেন –
‘বেলা বয়ে যায়,
গোধূলির মেঘ-সীমানায়’
কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ তাঁর নিসর্গ বর্ণনায় বিনষ্টশ্রীর চিত্র ফুটে ওঠে। গাছ-পাখি ফুলের বর্ণনা নয় – তার সঙ্গে হতশ্রী যুগের মেলবন্ধন আমরা তাঁর কবিতায় লক্ষ্য করি-
‘আলো-অন্ধকারে যাই-মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে;’
একটি কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতার এমন কিংবদন্তি হয়ে ওঠা বাংলা কবিতার বিস্তৃত ইতিহাসে খুব বেশি চোখে পড়ে না। প্রেমের কবিতা ধারায় বাঁক বদল ঘটিয়ে ‘বনলতা সেন’ –
‘‘বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’’
কবির ‘মহাপৃথিবী’ যেন চিত্ররূপময়তার কাব্য। কলমের আঁচড়ে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন কবিতা কোলাজ।
তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহান
কবি তাঁর জীবদ্দশায় তিরস্কার পেয়েছেন পুরস্কার রূপে। মরণোত্তর কালে ১৯৫৫ সালে ‘জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থের জন্য সাহিত্য একাডেমী লাভ করেন পুরস্কার লাভ করেন।
আবার আসিব ফিরে
১৯৫৪ সালের ২২শে অক্টোবর পৃথিবীর শ্লথতম যানের ধাক্কায় কবির মৃত্যু ঘটে। বর্তমান বছর (২০২৪) কবির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। জীবন-আনন্দ-এর সমাহারে যাঁর নাম সেই তিনিই আজীবন কাটিয়েছেন দারিদ্র্য, অনটন আর অশান্তির মধ্যে। বেঁচে থাকাকালীন তাঁর কবিতার জন্য তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, সমালোচকের কলমের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে কবি মনন। কিন্তু যত গড়িয়েছে সময় জীবনানন্দ ততো আরো বেশি করে পঠিত হয়েছেন। পৃথিবীর এমন কোন কলেজ নেই যেখানে বাংলা পঠিত হয় অথচ জীবনানন্দ পঠিত হয় না। তাই সময় যত এগুবে জীবনানন্দ আরো বেশি করে বাঙালি মরমে-মননে স্থান পাবেন। তাই সবশেষে বলি –
‘সব পাখি ঘরে আসে, সব নদী,
আসেনা জীবনানন্দ।
আরও কিছু রচনা