নুন কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর (SAQ) : একাদশ শ্রেণির বাংলা ক বিষয়ের অন্তর্গত একটি কবিতা হল ‘নুন’। এই কবিতার কিছু বড় প্রশ্ন উত্তর (SAQ) নিচে দেওয়া হয়েছে।
কবিতাটির কবি জয় গোস্বামী।
Nun Kobitar SAQ Part – 1
নুন কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর (SAQ) {Part-1} – একাদশ শ্রেণি – বাংলা
নুন
জয় গোস্বামী
বড় প্রশ্ন ও উত্তর (SAQ)
১। নুন কবিতায় আমরা কারা? [WBCHSE (XI) 2014, 2023]
উত্তর: উত্তর আধুনিককালের কবি জয় গোস্বামীর ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘নুন’ কবিতায় আমরা বলতে ক্ষুদ্রার্থে ‘বাপ-বেটা’ অর্থাৎ কথক ও তার বাবা। কিন্তু বৃহত্তর অর্থে, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেই সমস্ত দরিদ্র-প্রান্তিক মানুষকে বোঝানো হয়েছে।
২। ‘সব দিন হয় না বাজার সব দিন বাজার না হওয়ার কারণ কী? [WBCHSE (XI) 2015]
উত্তর: কবি জয় গোস্বামীর নুন কবিতা অনুসারে নিম্নবিত্ত জীবনে বিদ্যমান প্রাত্যহিক অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তা এবং তৎসহ ছায়ার মতো উপস্থিত ধার দেনা ও অসুখ তাদের অপ্রাপ্তির তালিকাকে ক্রমবর্ধিত করে বলেই সব দিন বাজার হয়ে ওঠে না।
৩। ‘রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি।’ – মাথায় রাগ চড়লে কী ঘটনা ঘটে?
উত্তর: কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতার সাধারণ মেহনতি মানুষ উদয়াস্ত পরিশ্রম করে কর্মক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে সামান্য ঠান্ডা ভাতটুক জুটলেও তার সঙ্গে লবণটুকু অমিল থাকে। আর তা দেখে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায় ক্রোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে বাপ-ছেলে মিলে সারা পাড়া মাথায় করে।
৪। ‘নুন’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া?
উত্তর: উত্তর আধুনিককালের কবি জয় গোস্বামীর ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘নুন’ কবিতাখানি।
৫। ‘আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাত কাপড়ে।’ – সাধারণ ভাত কাপড়ের দিন চলে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: রবি ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার আপ্তবাক্য – ‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি।’ কিন্তু বিপরীতে যার কিছুই নেই সেই নিম্নবিত্ত মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সাধারণ ভাত-কাপড়ের মতো ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই নিজস্ব চাহিদার সার্থকতা খোঁজে।
৬। ‘নুন’ কবিতায় সাধারণ মানুষের বাড়ি ফিরে রাগের কারণ কী?
উত্তর: মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা ফসল ফলায়, সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের ঘরেই নেই ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা। তাই রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন জোটে না বলেই রাগ তাদের মাথায় চড়ে।
৭। কবিতায় ‘নুন’ কিসের প্রতীক?
উত্তর: ‘নুন’ অপরিহার্যতার প্রতীক। অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু অপরিহার্য, সেটুকু বন্দোবস্ত করার দাবী পাঠক পাঠ্য কবিতায় সোচ্চার ভাষায় ধ্বনিত হয়েছে।
৮। ‘বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপ চারা।’ – এখানে গোলাপ চারা কিসের প্রতীক?
উত্তর: জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় কিনে আনা গোলাপচারাটি নিম্নমধ্যবিত্তের গোপনে লালিত সৌন্দর্য বিলাসিতার প্রতীক। তা যে কোন শ্রেণীর মানুষের অন্তরমনে সুপ্ত শখ, শৌখিনতা ও সৌন্দর্য বিলাসের অনুভূতিকেই ফুটিয়ে তোলে।
৯। ‘হলে হয় মাত্রা ছাড়া’ – কী হওয়ার কথা বলা হয়েছে? ‘মাত্রাছাড়া’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ১ + ১
উত্তর: উক্ত কবিতায় ‘হলে, হয়’ বলতে বাজার করার কথা বলা হয়েছে।
কবির কথায় দরিদ্র মানুষের অর্থের অভাবে রোজ বাজার করার মতো সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু বেশি রোজগার হলে দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে লালিত উচ্ছ্বাস ও তাগিদে; এলোমেলো কিংবা বেহিসাবি খরচ হয়ে যায়। এখানে সেই কথাই বলা হয়েছে।
নুন কবিতার সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
১০। ‘মাঝে মাঝে চলেও না দিন।’ – দিন না চলার কারণ কী?
উত্তর: কথকের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার মাত্রাটা চিরদিনই কম। অতি দরিদ্র সাধারণ মানুষ হিসেবে তাদের যে অতি সামান্য রোজগার তাতে তাদের প্রতিদিনের মন মূল চাহিদাটুকু পূরণ হলেও সংসারের সকল দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না। যখন অসুস্থতার মতো অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটে বা বাড়তি দায়িত্বের বোঝার ভার সামান্যতম বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের দিন চলে না।
১১। ‘আমাদের শুকনো ভাতে লবনের ব্যবস্থা হোক।’ – কাদের প্রতি এই আবেদন জানানো হয়েছে?
উত্তর: অষ্টাদশ শতকের কবি ভারতচন্দ্রের কাব্যে সাধারণ মাঝির চাওয়া দেবীর কাছে – ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ আর একবিংশ শতাব্দীতে আরেক কবির কবিতায় শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের এই আবেদন রাষ্ট্র শক্তির কাছে।
১২। ‘আমরা তো সামান্য লোক।’ – নিজেদের ‘সামান্য লোক’ বলার মধ্যে বক্তার কোন্ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
উত্তর: ‘নুন’ কবিতায় জয় গোস্বামী ‘সামান্য লোক’ শব্দবন্ধটির সাহায্যে বক্তার প্রবল ক্ষোভ ও অভিমানের প্রকাশ ঘটেছে। প্রাত্যহিক ন্যূনতম প্রয়োজন টুকু না পেয়ে নিজেকে বিশ্বসংসারে নগন্য মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন করে। এতে তার মনে জন্ম নেয় অপমানের ক্ষোভ। সেইসঙ্গে ‘সামান্য’ হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের উপেক্ষা আর তাচ্ছিল্যের প্রতি শ্লেষ ও ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে।
১৩। ‘আমরা তো অল্পে খুশি;’ – কারা, কেন অল্পে খুশি? ১ + ১
উত্তর: উত্তর আধুনিককালের কবি জয় গোস্বামীর ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘নুন’ কবিতায় আমরা বলতে ক্ষুদ্রার্থে ‘বাপ-বেটা’ অর্থাৎ কথক ও তার বাবা। কিন্তু বৃহত্তর অর্থে, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেই সমস্ত দরিদ্র-প্রান্তিক মানুষকে বোঝানো হয়েছে।
নিম্নবিত্ত পরিবারে অভাবনটন নিত্য লেগেই থাকে। যা তাদের গাসওয়া ও অল্পে সন্তুষ্ট থাকতে শিখিয়েছে।
নুন কবিতার উৎস, প্রকাশকাল, প্রেক্ষাপট, সারাংশ ও নামকরণের সার্থকতা